রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পরনিন্দা জঘন্য অপরাধ

পরনিন্দা জঘন্য অপরাধ

এহসান বিন মুজাহির
গিবত বা পরনিন্দা করা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করার নামই গিবত। চাই তা কথা, ইশারা-ইঙ্গিত বা লেখনীর মাধ্যমে হোক। গিবত আরবি শব্দ, বাংলায় বলা হয় পরনিন্দা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে এরশাদ করেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই কতক ধারণা গোনাহ। কারও গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই কর।’ (সূরা হুজুরাত : ১২)। পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ।’ (সূরা হুমাজাহ : ০১)। মহান আল্লাহ তায়ালা আরও এরশাদ করেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না।’ (সূরা হুজরাত : ১১)।
গিবত কী? এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি বলতে পার, গিবত কাকে বলে? সাহাবিরা আরজ করলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই (সা.) ভালো জানেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন, ‘গিবত হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারও অগোচরে তার এমন দোষ বলা যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তাই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা অপবাদ (তুহমত) হবে, যা গিবত থেকেও মারাত্মক গোনাহ।’ (মুসলিম : ২৫৮৯)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘গিবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গোনাহ। তিনি রাসুল (সা.) এর কাছে জানতে চাইলেন এটা কিরূপে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত করে তার গোনাহ প্রতিপক্ষের মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি : ২৪১২)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা একে অপরের পরনিন্দা করো না। আর পরনিন্দা হলো অপর ভাইয়ের এমন দোষ বর্ণনা করা যা তার অপছন্দ। যে ব্যক্তি অপর মুসলমানদের দোষ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানজনক শাস্তি দেবেন।’ (তিরমিজি : ২৬৩৯)। হাদিসে বর্ণিত আছে, একদা কোনো প্রয়োজনে এক বেঁটে মহিলা রাসুলের (সা.) খেদমতে আসেন। সে মহিলা চলে যাওয়ার পর হজরত আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.) এর কাছে ওই মহিলার দৈহিক কাঠামো বেঁটে হওয়ার ত্রুটি বর্ণনা করেন! আয়েশার (রা.) এ কথা শুনে রাসুল (সা.) এর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আয়েশা তুমি ওই মহিলাটির গিবত করলে! তুমি এমন কথা বললে যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে সমুদ্রের পানির রং পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, তার বেঁটে হওয়ার কথাই তো বলছি এবং এই ত্রুটি তো তার মধ্যে রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, হে আয়েশা যদিও তুমি সত্য কথা বলেছ; কিন্তু তুমি তার ত্রুটি বর্ণনা করায় তা গিবত তথা পরনিন্দা হয়ে গেল।’ (মুসলিম : ২৭৬১)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তাতে তিনটি ক্ষতি রয়েছে, প্রথমত, গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না। দ্বিতীয়ত, গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং তৃতীয়ত, আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হয়ে থাকে।’ (বোখারি : ২৮৩৭)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কারও দোষ বর্ণনা করতে ইচ্ছে কর, তখন নিজের দোষের কথা স্মরণ কর যাতে গিবতের কারণে জাহান্নামে যাওয়া থেকে বাঁচতে পার। যদি নিজের দোষ না দেখে শুধু অপরের দোষই বর্ণনা করতে থাক তাহলে পরকালে আল্লাহও তোমার দোষ প্রকাশ করবেন।’ (ইবনে মাজাহ : ২৫৪৬)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করবে না, গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, পরস্পর কলহ করবে না, হিংসা-বিদ্বেষ করবে না।’ (মুসলিম : ১৯০৩)। তবে কোনো ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে ব্যক্তি, দেশ কিংবা জাতিকে বাঁচাতে গিবত করা অপরাধ নয়। ব্যক্তি এবং জাতিকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে তাদের দোষগুলো মানুষকে জানিয়ে দেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে গিবত করা জায়েজ। পরিশেষে বলা যায়, পরনিন্দা মানুষের ঈমান-আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এসব নিন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877